Skip to content Skip to main navigation Skip to footer

সরস্বতী পূজোর হাতেখড়ি ও আলপনা র ইতিহাস

সরস্বতী পুজো র সাথে হাতেখড়ি জড়িয়ে আছে।সরস্বতী পুজো চলছে। তার পাশেই পুরোহিত বা প্রাজ্ঞ এক গুরুজনের কোলে বসে ফুটফুটে শিশুটি স্লেটে চক দিয়ে লিখছে অ, আ, ই, ঈ… ‘হাতেখড়ি’ বলতেই এমন চেনা ছবি ভেসে ওঠে আমাদের মনে। কিন্তু, এই ‘হাতেখড়ি’ আসলে কী? কেন, সরস্বতী পুজোর দিনেই তার এত বাড়বাড়ন্ত?

বলা হয়, বিদ্যার দেবীর আরাধনার দিনে সন্তানের অক্ষর পরিচয় শুরু হলে তাঁদের সন্তান সর্বদাই শিক্ষার সঙ্গে জুড়ে থাকবে- এমন ধারণা থেকেই সরস্বতী পুজোর দিন পুরোহিত বা অন্য কোনও প্রাজ্ঞজনের মাধ্যমে শিশুর হাতেখড়ি দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, শাস্ত্রমতে, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ গুরু তার মা। শিশুর হাতেখড়ি বা বিদ্যা আরম্ভ তার মায়ের হাত থেকে শুরু হওয়াই তাই বাঞ্ছনীয়। বলা হয়, এতে শিশুটির মেধা বৃদ্ধি ঘটে থাকে। অবশ্য শিশুটির মা যদি না থাকেন, তা হলে তার বাবা এই কাজ করতে পারেন।

প্রসঙ্গত, আজ থেকে দেড়শো-দুশো বছর আগের বাংলায় হাতেখড়ি হতো শুভঙ্করী আর্যা, চৌতিশা বা নামতা শিখে। ১৮৫৫ সালে ‘বর্ণপরিচয়’ প্রথমবার প্রকাশিত হওয়ার পরই সেই রীতি বদলে গিয়ে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মাধ্যমে হাতেখড়ি দেওয়ার প্রথা চালু হয়। যা, বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হওয়ার ১৬৫ বছর বাদেও একইরকমভাবে বিদ্যমান।

শুধু হাতেখড়িই নয়, সরস্বতী পুজো মানে স্কুল-কলেজ এবং বাড়ির মেঝেতে দেওয়া আলপনাও। যে কোনও আয়োজনই পূর্ণতা পায় এই আলপনায়। লাভ করে নতুন মাত্রাও। লক্ষ্মীপুজোর মতো না হলেও বাগদেবীর আরাধনার দিনটিতেও আলপনা দেওয়ার উন্মাদনা খুব কম কিছু নয়।

তবে, আলপনা দেওয়া শুধুই মনের খেয়ালে মূর্ত হওয়া কোনও তো কাজ নয়, তার জন্য চাই নিজস্বতাও। আলপনা তো শুধু আঁকা নয়, এক বিশেষ শিল্পরীতি। তার নির্দিষ্ট নকশা রয়েছে। লোকায়ত আলপনাকে ক্ল্যাসিক চেহারা দিয়েছিল শান্তিনিকেতন। ১৯২০ সালে শান্তিনিকেতনে এলেন প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসু, তৈরি হল কলাভবন। তিনি পঞ্চগুড়ি আলপনা দেওয়ার রীতির দিকে না গিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতেই মেতে উঠেছিলেন রঙের খেলায়।

এই আলপনা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের। বড় পাতা আর ছোট পাতা আকৃতির আলপনা, পদ্মের উপরে নকশা এঁকে বানানো আলপনা, মাটির থালার উপর নকশা করে আলপনা, বিভিন্ন রঙে তৈরি ফুল দিয়ে করা আলপনা, চার কোণাফুলের নকশার আলপনা ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়। তবে, এর বাইরেও রয়েছে আরও হরেক রকমের আলপনা এবং তার ডিজাইন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে নানা পরিবর্তন এসেছে আলপনার রূপে, রঙে, আঙ্গিকে, প্রকাশে। কিন্তু কখনই তা মূল থেকে দূরগামী হয়নি।

বিভিন্ন লোকায়ত উৎসবই আলপনার অনন্যতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজস্ব ভেঙে।

There are no comments yet

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।