Skip to content Skip to main navigation Skip to footer

বেড়ে ওঠার কষ্টগুলো – ২

বিয়ে করার সাধ ছিল ষোলোআনা,
শুধু সামর্থ্যের অভাবে তার প্রেমিকা হাঁটা দিলো ঘুরপথে।
নাকি বয়েস বেড়ে যাচ্ছিলো।

এটা একটা রাতের ঘটনা।

রমাকান্ত তার সযত্নপালিত কুল্লে দুটো সাদা শার্টের
একটাকে কয়লার ইস্তিরিতে পালিশ করে আর অন্যটাকে
সার্ফ-জলে ভিজিয়ে হাঁটা দিলো রাইটার্স-এর দিকে।

একে বলে সকাল।

কৃষ্ণেন্দু “ইন্টারভিউ যাচ্ছি” বলে সটান পৌঁছে গেলো
মিলেনিয়াম পার্ক।
মুড়িমাখা দিয়ে লাঞ্চ সেরে পোয়াটাক গ্লানি ও
সেরখানেক frustration মাখা ঘুম।

এর নাম দুপুরের অঘটন।

নববিবাহিতরা যে যার ঘরে ফিরলো পড়িমরি করে…
ভেটেরান আর হাফ-সোলরা গেলো নানাবিধ আড্ডার উদ্দেশ্যে…
ব্যাচেলররা জুড়ি খুঁজছে…

এটা শহরের সন্ধ্যে।

আর দিনের শেষে সেই প্রেমিক, সেই প্রেমিকা, সেই রমাকান্ত আর সেই কৃষ্ণেন্দু,
রাতের বালিশে মাথা, জানলার ফাঁক ফস্কে চাঁদে চোখ,
জানতেও পারলো না তার চেয়েও দুখী মানুষ
পাওয়া যায় এ শহরে।

শুধু চাঁদ জানে সে কথা…
বড় হবার কষ্টগুলো।

Read more

রম্যরচনা ১

বাবা কোপা দেখছিলেন। ভোরে উঠতে পারেননি তাই যখন দেখতে শুরু করেছেন তখন খেলা শেষের দিকে। বল পেটাপেটি আমার পছন্দ নয় তাই এমনিতে ফুটবল দেখি না। কাল থেকে ব্রাজিল আর্জেন্টিনার পোস্টে ফেসবুক ভেসে যাচ্ছে তাই চশমার কাঁচ মুছে ঘুম ঘুম চোখে এসে দাঁড়িয়ে ৫-৬ মিনিট দেখেছি।

Read more

জগন্নাথের মিহিদানা ভোগ

রথযাত্রা মানেই বৃষ্টি আর পাঁপড় ভাজা। রথের দিন পাঁপড় ভাজা খায় নি এমন বাঙালি বিরল। অথচ পাঁপড় ভাজা বস্তুটি জগন্নাথদেবের মেনুতেই নেই। জগন্নাথদেব যে বাঙালি খাবারটি খেতে সবচেয়ে ভালোবাসেন সেটি হলো – মিহিদানা !

সে এমনই ভালোবাসা, যে সে গল্পটিও লোকগাঁথায় অমর হয়ে গেছে। কথিত আছে, একবার জগন্নাথ দেবের বঙ্গদেশের মিহিদানা খাওয়ার সাধ হয়। পান্ডাদের ফাঁকি দিয়ে, সবার অলক্ষ্যে রাতের অন্ধকারে পুরীর মন্দির থেকে বেরিয়ে তিনি বঙ্গদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছান শ্রীরামপুরের কাছে গঙ্গার তীরে মাহেশ গ্রামে। সেখানে এক মিষ্টান্নর দোকানে পেট ভরে মিহিদানা খেয়ে তাঁর স্বর্গীয় তৃপ্তি হয়।

কিন্তু এইবার সমস্যা হলো দোকানী মিহিদানার দাম চাইতে। পয়সা তো তাঁর কাছে নেই ! নিজের ডান হাতের মহামূল্যবান বাজুবন্ধটিই হাত থেকে খুলে দোকানীকে দিয়ে দেন তিনি। পরের দিন পুজোর সময় পুরীর মন্দিরের সেবাইতরা দেখেন প্রভুর ডান হাতের বাজুবন্ধটি নেই। খুঁজতে খুঁজতে মাহেশে এসে সেটির খোঁজ পাওয়া গেলো। সন্দেহ রইলো না, মিহিদানা খেয়ে তৃপ্ত হয়ে প্রভু স্বয়ং সেটি রেখে গেছেন মাহেশে।

তাহলে বুঝুন বঙ্গদেশীয় মিহিদানার কী স্বর্গীয় স্বাদ যা স্বয়ং জগন্নাথদেবকে পুরী থেকে টেনে এনেছিল মাহেশে, আর আমরা কিনা পাঁপড় ভাজা নিয়ে পড়ে আছি ! সাধে কী মাইকেল মধুসূদন দত্ত দুঃখ করে লিখেছিলেন “কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল কানন” !

জগন্নাথ কথাটির অর্থ জগতের নাথ – অর্থাৎ তিনি সর্বত্র। এমন কী ইংরেজিতেও তিনি আছেন। সেই 1321 সাল থেকে। ইংরেজির “juggernaut” শব্দটি এসেছে জগন্নাথ থেকে যার অর্থ “a huge, powerful, and overwhelming force” ! চার্লস ডিকেন্স পর্যন্ত শব্দটি ব্যবহার করেছেন সেই ১৮৪৪ সালে প্রকাশিত লেখা “লাইফ এন্ড এডভেঞ্চার অফ মার্টিন চাজলউইট” নামক নভেলে।

কাজেই এই রথযাত্রায়, পাঁপড় ভাজার সঙ্গে মিহিদানাও খান ! জগতের নাথ সেই “huge, powerful, and overwhelming force” পর্যন্ত বঙ্গীয় মিহিদানার স্বর্গীয় স্বাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন !

জয় জগন্নাথ !

Read more

জগন্নাথদেবের মিহিদানা বিতর্ক

মিথ, ফেয়ারি টেল বা রূপকথা ইত্যাদি নিয়ে সৈয়দ মুজতবা আলী একটি অতি খাঁটি কথা লিখে গেছেন। তিনি লিখেছিলেন: “রাজপুত্রর সঙ্গে বাঘের দেখা হলো। বাঘ বললো “হালুম, এবার তোকে খাবো”! এটি রূপকথা সন্দেহ নেই তাই বলে বাঘ যে মানুষ খায় এটা তো সত্যি!”

জগন্নাথ দেবের মিহিদানা প্রীতির যে গল্পটি লিখেছি সেটি এরকমই একটি মিথ। এই মিথ্ নিয়ে অনেকেই জানালেন যে গল্পটা ঠিকই আছে তবে মিষ্টি টা মিহিদানা নয়। ওটা গুটকে সন্দেশ। কেউ আবার বললেন মনোহরা। জনৈক বললেন মিহিদানা ১৯০৪ সালে বর্ধমানে আবিষ্কৃত আর মাহেশের রথ সেই ১৩৯৬। তাছাড়া মাহেশের মিহিদানা বিখ্যাত নয়। কী করে সম্ভব?‎

জগন্নাথ দেবের প্রিয় মিষ্টি নিয়ে বিতর্ক এই প্রথম নয়। রসগোল্লা বস্তুটিকে ভারত সরকার বাংলার নবীন ময়রার আবিষ্কার বলে জি. আই রেজিস্ট্রেশন দিয়েছেন। উড়িষ্যা সরকার তাতে ভীষণ আপত্তি জানিয়েছিল। এমন কি কোর্টে মামলাও করেছিল। উড়িষ্যার বক্তব্য ছিল সেই প্রাচীনকাল থেকে পুরীর উল্টোরথে “রসগোল্লা ভোগ” প্রচলিত। রথযাত্রা শেষে মন্দিরে ফেরার পর গিন্নির মানভঞ্জনে এই রসগোল্লারই শরণাপন্ন হন জগন্নাথদেব। পুরীর মন্দিরে বছরের এই একটি দিনই মন্দিরের বাইরে তৈরি ভোগ ভিতরে ঢোকে। এগুলো তো প্রাচীন ইতিহাস। তাহলে রসগোল্লা বাংলার হয় কী ভাবে ?

‎বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাচীন উড়িষ্যার “রসগোল্লা” আর ১৮৬৮ সালে নবীন ময়রার তৈরী রসগোল্লা এক বস্তু নয়। কিন্তু এই নিয়ে বিতর্ক চলবে।

‎এবার আসি মিহিদানায়। গবেষকরা বলছেন, মিহিদানার আবিষ্কর্তা ক্ষেত্রনাথ নাগ এবং মিহিদানার আবিষ্কার হয় আনুমানিক ১৮৩২ সালে (রসগোল্লারও আগে)। কিন্তু মিষ্টিটি তখন মোটেই পপুলার ছিল না।

‎‎১৯০৪ সালে লর্ড কার্জন, বর্ধমানের জমিদার বিজয়চাঁদ মহতাবকে “মহারাজা” খেতাব দিতে বর্ধমান আসেন। কার্জনের বর্ধমান আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিজয়চাঁদ বর্ধমানের মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে একটি বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বলেন।

‎ভৈরবচন্দ্র নাগ তার পূর্বপুরুষ ক্ষেত্রনাথ নাগের রেসিপি দিয়ে মিহিদানা বানিয়ে লর্ড কার্জনকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপর থেকেই মিহিদানার জয় জয়কার। তাই মিহিদানা আবিষ্কারের সাল হিসেবে ১৯০৪ টি বহুল প্রচলিত হলেও এটির জন্ম তার ৭২ বছর আগে ! হয়তো তার আগেও অন্য রূপে এবং নামে মিষ্টিটির কোনো পূর্বপুরুষ ছিল।

‎জগন্নাথদেব কেন মিহিদানা খেতে বর্ধমান ছেড়ে মাহেশে যাবেন? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর হয় না। এটি একটি মিথ। সম্ভবত মাহেশে স্থান মাহাত্ম্য বোঝানোর জন্যই এটির সৃষ্টি। জগন্নাথ দেবের মাহেশ সম্পর্কিত মিষ্টিটি যে মিহিদানা, সে সম্পর্কে আমার তথ্য সূত্র ছিল সুমনা সাহা নামে এক গবেষকের লেখা একটি বই। বইটির নাম “মাহেশের রথ – ভক্তি বিশ্বাসের এক জীবন্ত রূপকথা”। এই গল্পটি সেই বইয়ে পেয়েছিলাম। সেখানে মিহিদানারই উল্লেখ আছে। এছাড়া “বাজুবন্ধ পালা” বলে একটি প্রাচীন যাত্রাপালার কথা আছে । সেখানেও মিহিদানার কথাই বলা হয়েছে।

‎কাজেই সৈয়দ মুজতবা আলী সাহেবের কথাই শুনুন। বাঘ মানুষ খায় এটা যেমন সত্যি, মিষ্টি প্রিয় বাঙালি মিহিদানা ভালো খায় এটাও সত্যি। তাই গপগপিয়ে মিহিদানা খান আর ধরে নিন জগন্নাথদেব আস্বাদিত মহাপ্রসাদ-ই খাচ্ছেন।

‎বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর !

Read more

শ্রাবনের রাতে

শ্রাবণ মাসের কোনও বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া,

আনকোরা সাধারণ রাত।

তোমাকে লিখতে বসে ধীরে ধীরে বেড়ে চলে

না লেখার নানা অজুহাত।

মাথার ভিতর থেকে একে একে মুছে যায় পরিচিত সব মেটাফর।

মনে পড়ে যায় এক থেমে থেমে পাখা চলা,

কমদামে ভাড়া নেওয়া ঘর।

জানলার ফাঁক দিয়ে বর্ষায় জল ঢোকে,

শীতকালে হু-হু করে হাওয়া।

কখনও ঝগড়া শেষে পড়শিরা টের পেতো ভারী হয়ে থাকা আবহাওয়া।

তখন বাড়ন্ত চাল, হাফ ডিম একবেলা,

মাঝেমধ্যে বন্ধ হওয়া জল।

কিন্তু প্রতিটা রাত আগের রাতের মতো অভিশাপহীন অবিকল।

Read more

সরস্বতী পূজোর হাতেখড়ি ও আলপনা র ইতিহাস

সরস্বতী পুজো র সাথে হাতেখড়ি জড়িয়ে আছে।সরস্বতী পুজো চলছে। তার পাশেই পুরোহিত বা প্রাজ্ঞ এক গুরুজনের কোলে বসে ফুটফুটে শিশুটি স্লেটে চক দিয়ে লিখছে অ, আ, ই, ঈ… ‘হাতেখড়ি’ বলতেই এমন চেনা ছবি ভেসে ওঠে আমাদের মনে। কিন্তু, এই ‘হাতেখড়ি’ আসলে কী? কেন, সরস্বতী পুজোর দিনেই তার এত বাড়বাড়ন্ত?

বলা হয়, বিদ্যার দেবীর আরাধনার দিনে সন্তানের অক্ষর পরিচয় শুরু হলে তাঁদের সন্তান সর্বদাই শিক্ষার সঙ্গে জুড়ে থাকবে- এমন ধারণা থেকেই সরস্বতী পুজোর দিন পুরোহিত বা অন্য কোনও প্রাজ্ঞজনের মাধ্যমে শিশুর হাতেখড়ি দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, শাস্ত্রমতে, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীর প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ গুরু তার মা। শিশুর হাতেখড়ি বা বিদ্যা আরম্ভ তার মায়ের হাত থেকে শুরু হওয়াই তাই বাঞ্ছনীয়। বলা হয়, এতে শিশুটির মেধা বৃদ্ধি ঘটে থাকে। অবশ্য শিশুটির মা যদি না থাকেন, তা হলে তার বাবা এই কাজ করতে পারেন।

প্রসঙ্গত, আজ থেকে দেড়শো-দুশো বছর আগের বাংলায় হাতেখড়ি হতো শুভঙ্করী আর্যা, চৌতিশা বা নামতা শিখে। ১৮৫৫ সালে ‘বর্ণপরিচয়’ প্রথমবার প্রকাশিত হওয়ার পরই সেই রীতি বদলে গিয়ে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মাধ্যমে হাতেখড়ি দেওয়ার প্রথা চালু হয়। যা, বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হওয়ার ১৬৫ বছর বাদেও একইরকমভাবে বিদ্যমান।

শুধু হাতেখড়িই নয়, সরস্বতী পুজো মানে স্কুল-কলেজ এবং বাড়ির মেঝেতে দেওয়া আলপনাও। যে কোনও আয়োজনই পূর্ণতা পায় এই আলপনায়। লাভ করে নতুন মাত্রাও। লক্ষ্মীপুজোর মতো না হলেও বাগদেবীর আরাধনার দিনটিতেও আলপনা দেওয়ার উন্মাদনা খুব কম কিছু নয়।

তবে, আলপনা দেওয়া শুধুই মনের খেয়ালে মূর্ত হওয়া কোনও তো কাজ নয়, তার জন্য চাই নিজস্বতাও। আলপনা তো শুধু আঁকা নয়, এক বিশেষ শিল্পরীতি। তার নির্দিষ্ট নকশা রয়েছে। লোকায়ত আলপনাকে ক্ল্যাসিক চেহারা দিয়েছিল শান্তিনিকেতন। ১৯২০ সালে শান্তিনিকেতনে এলেন প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসু, তৈরি হল কলাভবন। তিনি পঞ্চগুড়ি আলপনা দেওয়ার রীতির দিকে না গিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতেই মেতে উঠেছিলেন রঙের খেলায়।

এই আলপনা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের। বড় পাতা আর ছোট পাতা আকৃতির আলপনা, পদ্মের উপরে নকশা এঁকে বানানো আলপনা, মাটির থালার উপর নকশা করে আলপনা, বিভিন্ন রঙে তৈরি ফুল দিয়ে করা আলপনা, চার কোণাফুলের নকশার আলপনা ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়। তবে, এর বাইরেও রয়েছে আরও হরেক রকমের আলপনা এবং তার ডিজাইন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে নানা পরিবর্তন এসেছে আলপনার রূপে, রঙে, আঙ্গিকে, প্রকাশে। কিন্তু কখনই তা মূল থেকে দূরগামী হয়নি।

বিভিন্ন লোকায়ত উৎসবই আলপনার অনন্যতাকে বাঁচিয়ে রেখেছে নিজস্ব ভেঙে।

Read more

বড়ো শীতকাতুরে দিল


বড়ো শীতকাতুরে দিল

প্রেমে পড়ছে অনাবিল।

রাখা আলগোছে সোয়েটার

আধো উষ্ণতা সয় তার।

রোদ বুনছে শীতলপাটি,

আমি সন্তর্পনেই হাঁটি।

নোঙর ভেড়াবে কম্পাস,

তুই সেখানেও কম পাস।

মন সস্তা, দামি লেপে

একা শরীর সরীসৃপে,

রাত নিশাচর পরিযায়ী

ভর-কুয়াশায় শুতে যাই।

তবু, বেপরোয়া খড়কুটো

কেনে ভালোথাকা একমুঠো

আর শিশির ভেজা পায়ে

চেনা শহর খুঁজে পায়।

Read more