রথযাত্রা মানেই বৃষ্টি আর পাঁপড় ভাজা। রথের দিন পাঁপড় ভাজা খায় নি এমন বাঙালি বিরল। অথচ পাঁপড় ভাজা বস্তুটি জগন্নাথদেবের মেনুতেই নেই। জগন্নাথদেব যে বাঙালি খাবারটি খেতে সবচেয়ে ভালোবাসেন সেটি হলো – মিহিদানা !
সে এমনই ভালোবাসা, যে সে গল্পটিও লোকগাঁথায় অমর হয়ে গেছে। কথিত আছে, একবার জগন্নাথ দেবের বঙ্গদেশের মিহিদানা খাওয়ার সাধ হয়। পান্ডাদের ফাঁকি দিয়ে, সবার অলক্ষ্যে রাতের অন্ধকারে পুরীর মন্দির থেকে বেরিয়ে তিনি বঙ্গদেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। হাঁটতে হাঁটতে এসে পৌঁছান শ্রীরামপুরের কাছে গঙ্গার তীরে মাহেশ গ্রামে। সেখানে এক মিষ্টান্নর দোকানে পেট ভরে মিহিদানা খেয়ে তাঁর স্বর্গীয় তৃপ্তি হয়।
কিন্তু এইবার সমস্যা হলো দোকানী মিহিদানার দাম চাইতে। পয়সা তো তাঁর কাছে নেই ! নিজের ডান হাতের মহামূল্যবান বাজুবন্ধটিই হাত থেকে খুলে দোকানীকে দিয়ে দেন তিনি। পরের দিন পুজোর সময় পুরীর মন্দিরের সেবাইতরা দেখেন প্রভুর ডান হাতের বাজুবন্ধটি নেই। খুঁজতে খুঁজতে মাহেশে এসে সেটির খোঁজ পাওয়া গেলো। সন্দেহ রইলো না, মিহিদানা খেয়ে তৃপ্ত হয়ে প্রভু স্বয়ং সেটি রেখে গেছেন মাহেশে।
তাহলে বুঝুন বঙ্গদেশীয় মিহিদানার কী স্বর্গীয় স্বাদ যা স্বয়ং জগন্নাথদেবকে পুরী থেকে টেনে এনেছিল মাহেশে, আর আমরা কিনা পাঁপড় ভাজা নিয়ে পড়ে আছি ! সাধে কী মাইকেল মধুসূদন দত্ত দুঃখ করে লিখেছিলেন “কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল কানন” !
জগন্নাথ কথাটির অর্থ জগতের নাথ – অর্থাৎ তিনি সর্বত্র। এমন কী ইংরেজিতেও তিনি আছেন। সেই 1321 সাল থেকে। ইংরেজির “juggernaut” শব্দটি এসেছে জগন্নাথ থেকে যার অর্থ “a huge, powerful, and overwhelming force” ! চার্লস ডিকেন্স পর্যন্ত শব্দটি ব্যবহার করেছেন সেই ১৮৪৪ সালে প্রকাশিত লেখা “লাইফ এন্ড এডভেঞ্চার অফ মার্টিন চাজলউইট” নামক নভেলে।
কাজেই এই রথযাত্রায়, পাঁপড় ভাজার সঙ্গে মিহিদানাও খান ! জগতের নাথ সেই “huge, powerful, and overwhelming force” পর্যন্ত বঙ্গীয় মিহিদানার স্বর্গীয় স্বাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন !
জয় জগন্নাথ !